Romantic Valobasar Bangla Golpo Ep -8। রোমান্টিক ভালোবাসার বাংলা গল্প পর্ব -৮।

 Romantic Valobasar Bangla Golpo Ep -8। রোমান্টিক ভালোবাসার বাংলা গল্প পর্ব -৮।

Romantic Valobasar Bangla Golpo Ep -8। রোমান্টিক ভালোবাসার বাংলা গল্প পর্ব -৮।

আমি বিয়ে করেছি ২০০১ সালের ৭ই জুন।

সেই হিসেবে এই বছর  ৭ই জুন ছিল আমাদের ২১তম বিয়ে বার্ষিকী। 

বিয়ের দুই তিন বছর,বাচ্চা হওয়ার আগ পর্যন্ত বিয়ে বার্ষিকী পালন করতাম।

 বউকে বাইরে নিয়ে যেতাম,পছন্দের ড্রেস কিনে দিতাম। ফুল কিনে দিতাম।পছন্দের মুভি দেখতাম। ফেরার পথে ভালো কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করতাম। 

 

বাচ্চা হওয়ার পর এসব বন্ধ হয়ে গেলো। 

 

স্বাভাবিক কারনেই বাচ্চা হওয়ার পর বউয়ের কাছে স্বামীর গুরুত্ব কমে যায়। হয়তো ভালবাসাও। এই সময়ে এসে ভালবাসা বাচ্চার সাথে   ভাগাভাগি হয়ে যায়। 

আমার দুই বাচ্চা। ওদেরকে নিয়েই বউয়ের জগৎ। আমার চেয়ে বাচ্চাদের দিকেই তার মনোযোগ বেশি। হয়তো সব মায়েরাই তা করেন।

আজকাল বিয়ে বার্ষিকীর কথা মনেই থাকে না। কেউ হয়তো মনে রাখার চেষ্টাও করি না। নিজেদের জম্মদিনও তেমন একটা পালন করা হয় না। 

এই বছর  ৭ই জুনের  ঘটনা।

আমি ডায়াবেটিস রোগী। সকাল বেলা রুটি সবজি আর একটা সিদ্ধ ডিম খেয়ে বেরিয়ে গেলাম। বউকে বলে গেলাম, দুপুরবেলা বাসায় এসে খাবো।

নারায়ণগঞ্জ  গিয়ে কাজে আটকা পড়ে গেলাম। দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে গেল। 

এই সময়ের মধ্যে বাসা থেকে কয়েকবার ফোন চলে এলো।

 সন্ধ্যার পর একটা কফিশপে গিয়ে একজনের সাথে কফি খাচ্ছি।  পাশে  এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। সে তাদের বিয়ে বার্ষিকীর কেক নিতে এসেছে। তখন আমার মনে হলো, আরে! আজকে তো আমাদেরও বিয়ে বার্ষিকী!

হিসাব করে দেখলাম,সেদিন আমাদের ২১তম বিয়ে বার্ষিকী! মনে মনে বললাম, বউকে একটা সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়?

বাসায় ফোন দিলাম।  ধরলো মেয়ে। আমি বললাম, মামুনি, আজকে বাসায় খেও না,তোমার জন্য নানরুটি আর গ্রিল আনবো। মাকেও খেতে নিষেধ কর।

গ্রিল আর নানরুটি আমার মেয়ের ভীষন পছন্দ। 

কিছুক্ষণ পরই বউ ফোন দিয়ে বলল, কিছু আনার দরকার নাই, দুপুর এবং রাতের খাবার রান্না করা আছে। তুমি এমনিতেই দুপুরে খাও নাই। খাবার নষ্ট হবে।

আমি বললাম,  নষ্ট হয় হউক। একদিনের ব্যাপার।  ছেলেকেও খেতে নিষেধ কর। তোমার জন্য কী আনবো?

বউ বলল, কিছুই আনতে হবে না। শুধু শুধু টাকা নষ্ট করার দরকার নাই। ফ্রিজে খাবার আছে, গরম করে নিলেই হবে। 

আমি জানি, বউ কাচ্চি বিরিয়ানি আর টিক্কা  বেশ পছন্দ করে। সাথে বাদামের জুস। 

আমি একটা দুই পাউন্ড জম্মদিনের কেক অর্ডার করে smartex এর দোকানে গেলাম। দোকানদার আমার বেশ ঘনিষ্ঠ। ঈদ উপলক্ষে তো এমনিতেই বউকে কিছু দিতে হবে। এই উপলক্ষে বউয়ের পছন্দের কালারের একটা ড্রেস কিনে ফেললাম। 

এখন কিনলে ঈদে আর লাগবে না।

‘সুগন্ধা’ রেস্টুরেন্টে  গিয়ে চারটা গ্রিল, নানরুটি আর বোরহানি নিলাম।

চাষাড়ায়  ‘কাচ্চিভাই’ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ওখানে  গিয়ে কাচ্চি বিরানি আর বাদামের জুস নিলাম। সাথে টিক্কা।   

তারপর কেক নিয়ে বাসায় ফিরলাম। 

বাসায় ফিরতে ফিরতে দশটা বেজে গেল।

আমার এক ছেলে এক মেয়ে।

ওরা  বসে বসে টিভি দেখছে। ওদের মা পাশের রুমে কাপড় গোছাচ্ছে। 

 

মেয়েকে সব খুলে বললাম। 

 

মেয়ে দ্রুতই টেবিলে সব কিছু সাজিয়ে ফেলল। কেকের চারপাশে একুশটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো। সব কিছু গুছিয়ে মাকে ডাকতে   গেলো।

বউ এসেই হৈ চৈ শুরু করলো, রাগী রাগী গলায় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বুড়ো বয়সে এইসব কী ঢং ! আহ্লাদ করার আর জায়গা পাও না, নাকি!!

 আমি বললাম, আজকের দিনটার কথা তোমার মনে ছিল?

 

 বউ অভিমানের গলায় বলল, মনে থাকবে না কেন?

 

  আমাকে বল নাই কেন?

সে যেন নিজেই নিজেকে বলছে এমন করে বলল, সব কথা সব সময় বলতে নাই। কিছু কিছু প্রিয় কথা থাকে, বলতে ইচ্ছা করে না। কাউকে না!

বুঝলাম, তার বুকে অভিমান জমেছে। 

 আমি কথা বলতে পারলাম না। ভাষা হারিয়ে ফেললাম। বুঝতে পারলাম, এক বুক অভিমান নিয়েও মেয়েরা হাসি মুখে সংসার করে যায়। কোন অভিযোগ না করেও!

তারা সুখের অভিনয় ভালো পারে।

আমরা মেয়ের জম্মদিন পালন করি, কন্যা দিবস পালন করি, বউয়ের কথা মনে করি না। 

মেয়ে বলল,মা, বাবা তোমার জন্য সুন্দর একটা ড্রেস এনেছে,এক্ষুনি পরে এসো তো!

বউ কিছুতেই নতুন ড্রেস পরবে না। সে বলল,খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে। তোরা খেতে শুরু কর।

মেয়ে বলল,খাবার ঠান্ডা হয় হউক। তুমি নতুন ড্রেস না পরলে আমরা কেউ কিছু খাবো না।

অগত্যা বউ নতুন ড্রেস নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো।  মেয়ের অনুরোধে আমি কাপড় চেইন্জ করে নতুন একটা পান্জাবি পরলাম। 

দশ মিনিটের মাথায় বউ নতুন ড্রেস পরে সাজগোছ করে  বেড়িয়ে এলো। মেয়ে দৌড়ে মোবাইল নিয়ে এলো ছবি তোলার জন্য।

মেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে  বলল,মা তোমাকে তো অসাধারন লাগছে, একেবারে তামিল নায়িকাদের মতো!

মা মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে হাসতে লাগলো।

বউয়ের মুখে এখন আর রাগী ভাবটা নাই,তার মুখে সুখী সুখী একটা ভাব চলে এসেছে। 

আমরা সবাই মিলে কেক কাটলাম।

 কেক কাটার সময় বউ প্রান খুলে হাসছে। আমার দিকে বারবার লজ্জা নিয়ে তাকাচ্ছে। সবার মুখে কেক তুলে দিচ্ছে। 

আমি মনে করতে পারলাম না, লাস্ট কবে বউয়ের এমন আনন্দময় মুখ দেখেছি। নিজেকে কেন যেন অপরাধী মনে হতে লাগল।

কেক কাটতে কাটতে মেয়ে বলল,হ্যাপি বিবাহ বার্ষিকী, মা। বাবা, তোমাকেও ধন্যবাদ। 

আনন্দে আমার চোখে পানি চলে এলো।

 মনে হল, হায়! এই ছোট ছোট আনন্দ গুলোই তো মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরনা। মানুষ তো আনন্দের জন্যই বাঁচে। 

আমার মনে হলো, অনেকদিন হয়,বউয়ের মুখে এমন প্রানখোলা হাসি দেখি নাই। অথচ, এই হাসি দেখার জন্য খুব বেশি অর্থ খরচ করতে হয় না। 

বউকে তো ঈদের ড্রেস কিনে দিতেই হতো। 

কেক আর খাবার বাবদ খরচ হয়েছে চার হাজার টাকার মতো। অথচ, এরচেয়ে অনেক বেশি টাকা অকারণে খরচ করে ফেলি।

মাত্র চার হাজার টাকা খরচ করে আমি একটা বিশাল আনন্দের মূহুর্ত কিনে ফেললাম!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *