Aditi And Abir Er Porokia Premer Bangla Golpo Ep 05

 Aditi And Abir Er Porokia Premer Bangla Golpo Ep 05.

Aditi And Abir Er Porokia Premer Golpo Ep 05.

শ্বশুর বাড়ি এসে জানতে পারলাম আমার বউ বাড়িতে নেই। গত পনের দিন ধরে ওর মোবাইল বন্ধ! আমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ তার নেই! কেন অদিতি এমন করছে, তার কি হয়েছে? কিছু বুঝতে পারছি না আমি! এমন তো হওয়ার কথা না! হঠাৎ কি এমন ঘটে গেল, যার জন্য এমন করছে সে? সেটা আমি নিজের চোখেই দেখতে চাই! 

তাই এই রহস্য উদ্ধার করতে বাধ্য হয়ে আমাকে এমন হঠাৎ করেই শ্বশুর বাড়িতে আসতে হয়েছে।শ্বশুর শ্বাশুড়ি ফোন রিসিভ করে বলে, অদিতি একটু বাইরে গেছে। শালা শালী ফোন রিসিভ করে বলে, আপু একটু বাইরে গেছে। দুলাভাই চিন্তা করবেন না, আপু এখনই এসে পড়বে! 

শ্বশুর শ্বাশুড়ি ফোন রিসিভ করে বলে, বাবা চিন্তা করো না। অদিতি বাইরে থেকে এলেই তোমার সাথে কথা বলতে বলবো। কিন্তু তাদের কারও কথা অনুযায়ী অদিতি বাইরে থেকে এসে আমাকে ফোন করে না!

হঠাৎ করে ওর ফোনটাই বা কেমন করে নষ্ট হয়ে গেল? যদিও শ্বশুর বাড়ির সবাই বলেছে সেটা পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে! কিন্তু ওর এমন আচরণে আমার মাথায় সব ঘুলিয়ে যাচ্ছে। কারণ সে একবার অন্তত আমাকে ফোন করতে পারতো?

তা না করুক! তাতেও মনের মধ্যে কোন কষ্ট নেই আমার। কিন্তু বারবার ফোন করেও যে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। সেটাই এখন আমার হৃদয়ে ক্ষোভ ও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যাপারটা আমার কাছে একেবারে অসম্ভব অসহ্য হয়ে উঠেছে। নিজেকে আর কিছুতেই স্থীর রাখতে পারলাম না। 

তাই অস্থির হয়ে ভাবি সে কতোই বাইরে থাকে যে, আমার সাথে যোগাযোগ করার সময় পর্যন্ত পায় না? নাকি ইচ্ছে করেই আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সে? আবার ভাবি ইচ্ছে করে করবে কেন? আমি তো তার সাথে এমন কোন আচরণ করিনি। যার কারণে সে এমন ব্যাবহার করতে পারে? 

অদিতির সাথে তো আমার বেশ ভালো সম্পর্ক! বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন কারণে ঝগড়া তো দূরের কথা। সাধারণ মনমালিন্য পর্যন্ত এখনো হয়নি আমাদের মধ্যে। বিয়ের পর থেকে আমরা যতোটা না স্বামী স্ত্রী। তারচেয়ে বেশী দুজন দুজনের বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছি। আর ঠিক এরমধ্যে এমন আচরণ কি করে মেনে নেওয়া যায়?

তবুও বুকের মাঝখানে সব কিছু চাপা দিয়ে চুপ করে থেকেছি।বলেছি অদিতি ফিরলে যেনো ফোন করে। কথা মতো গত পনের দিন ধরে আমি ওর সাথে কথা বলার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করে আসছি। 

অথচ বারবার চেষ্টা করেও এই পনের দিনের মধ্যে একবারও আমার বউয়ের সাথে আমি কথা বলতে পারছিলাম না। তাই আর চুপ করে বসে থাকতে পারলাম না। তাহলে কথার চাপে বুক ফেটে যাবে! 

তাই আর ধৈর্যের পরিক্ষা দিতে আমি প্রস্তুত নই বলে, সশরীরে শ্বশুর বাড়িতে এসে হাজির হলাম। মনে হচ্ছে শ্বশুর বাড়িতে কেউ আমার এমন হঠাৎ আগমনে খুশি হতে পারে নি! তাতে অবশ্য আমার এখন তেমন কিছু যায় আসে না! 

এসেই বুঝতে পারলাম অদিতি আমাকে না জানিয়েই কোথাও বেড়াতে গেছে! তাই তারা এই লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছে! এ ব্যাপারে আমার শ্বাশুড়কে জিজ্ঞেস করলাম, আব্বা আপনার মেয়ে কোথায় বেড়াতে গেছে?

শ্বশুর আমার দিকে তাকিয়ে সহজ কন্ঠে জবাব দিলেন, বাবা! আমাকে জিজ্ঞেস করে কোন লাভ নেই। তোমার শ্বাশুড়ির কাছে জিজ্ঞেস করে দেখো! সে নিশ্চয়ই বলতে পারবে অদিতি এখন কোথায়? অদিতি কেন? তাঁর কোন ছেলে মেয়েই তাঁর কথা ছাড়া কোথাও যায় না। 

এই সংসারে আমিও তো বাবা নামে মাত্র কর্তা! তাই এই কর্তার ইচ্ছেতে এই সংসারের কোন কর্মই এখন আর সম্পন্ন হয় না। সময় হলে বুঝতে পারবে বাবা! দিন পাল্টে গেছে! তাই আগের কথাগুলো পাল্টেছে। এখন কর্তীর ইচ্ছাতে কর্ম, আর টাকাই বড় ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে! 

মনে মনে বুঝতে পারলাম, শ্বশুর আমার শ্বাশুড়ির একনিষ্ঠ বাধ্যগত স্বামী! বউয়ের আঁচল তলেই তাঁর নিরাপদ আশ্রয়! তাই কোন কারণেই তিনি শ্বাশুড়ির কর্মে হস্তক্ষেপ করে নিজের নিরাপদ আশ্রয় হারাতে রাজি নন!

শালীকে সামনে দেখতে পেয়ে তার কাছে জিজ্ঞেস করলাম তোমার আপু কোথায় গেছে? শালি আমার কথার জবাব দিতে যেনো হিমসিম খাচ্ছে!  শ্বাশুড়ি এসে আমার কথা শুনে ফেলে বললেন, অদিতি বেড়াতে গেছে বাবা! দুদিনের মধ্যে নিশ্চয়ই এসে পড়বে সে!

রাগের মাথায় জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় গেছে, সেটা বলুন? আমি তো তার স্বামী! আমাকে একটিবার বলে যেতে পারতো না কি? শ্বাশুড়ি বললেন আমিই যেতে বলেছি বাবা! আগে যদি জানতাম তুমি রাগ করবে! তবে যেতে দিতাম না। তুমি আমার কথা ভেবে রাগ করোনা বাবা!

মেয়েটা আমার অনেক দিন কোন আত্মীয়ের বাড়ি  বেড়াতে যায়নি তো! তাই মনে করলাম একটু ঘুরে আসুক। তুমি বাড়ি যাও বাবা! আমি ওকে তোমাদের ওখানে নিয়ে যাবো। তুমি কোন চিন্তা করো না। কয়েক দিনের মধ্যেই অদিতি ফিরে আসবে। 

আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি থেকে শুরু করে সে বাড়ির সবার মধ্যে একটা জিনিস আমি খেয়াল করলাম। তারা আমার কাছে কিছু একটা তো লুকাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু অনেক মাথা খাটিয়েও আমি বুঝতে পারলাম না! সেটা কি হতে পারে?

তারা সবাই চাইছে আমি যেনো তখনই তাদের বাড়ি থেকে চলে যাই! যদিও লজ্জার মাথা খেয়ে মুখ ফুটে কেউ তারা আমাকে কিছু বলতে পারলোনা। আমিও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে থেকে গেলাম শ্বশুর বাড়িতে। দেখা যাক কি হয়? 

বুঝতে পারলাম আমার থেকে যাওয়াতে তারা কেউই খুব একটা খুশি হতে পারে নি। আগেই বলেছি তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না! আমি আমার বউকে সাথে না নিয়ে এখান থেকে এক চুলও নড়ছি না। এই আমার মনের মধ্যে দৃঢ় সংকল্প। 

সকালে নাস্তা দিয়ে যাবার সময় শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করলেন, সায়েম তোমার অফিস কামাই হচ্ছে না বাবা? মেয়েটা যে কি হয়েছে আমার! বেড়াতে গিয়ে একেবারে গেঁড়ে বসেছে! এদিকে জামাই বাবাজীর কতটা লস হচ্ছে সেই চিন্তা যদি থাকে? 

আমি সাথে সাথে জবাব দিলাম। সেই চিন্তা নেই আম্মা! লম্বা ছুটি নিয়েছি। আমার কথা শুনে শ্বাশুড়ির মুখে সহসাই অন্ধকার নেমে এলো। বললো যাই বলো না কেন বাবা! ওর জন্যই তো তোমাকে এমন লম্বা ছুটি নিতে হলো? হুম তা ঠিক বলেছেন। 

আমিও সুযোগ বোঝে বলে ফেললাম, আম্মা! একবার ঠিকানাটা দেন আমিই তাঁকে নিয়ে আসছি। অনেক দিন তো বেড়ানো হয়েছে। অদিতি মনে হচ্ছে একা আসতে পারছে না। আমি গিয়ে ওঁকে নিয়ে আসি?

তা আম্মা! অদিতি তার কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছে? আমার বড় বোনের বাড়িতে। শ্বাশুড়ি মুখ কালো করে জবাবটা দিলেন। বড় আপার কোন ছেলে মেয়ে নেই তো! তাই তার কাছে থেকেই একরকম বড় হয়েছে অদিতি। উনার এমন অসুস্থতার খবর শুনে স্থীর থাকতে পারেনি মেয়েটা। তাই আর বাঁধা দিতে পারিনি। 

তাহলে আম্মা ঠিকানাটা দেন। আমি এখনই ওখানে গিয়ে অদিতি কে নিয়ে আসছি। জিজ্ঞেস করলাম আমি তবে রেডি হয়ে আসি? আপনি ঠিকানা বলুন! 

আমার শ্বাশুড়ি আমার কথা শুনে যেনো আঁতকে উঠলেন। মুখে সামান্য হাসি ফুটিয়ে বললেন সে কি বাবা! তুমি আমার বড় মেয়ের জামাই। ফেলনা তো নও! আমি যেচে তাদের বাড়ি তোমাকে কেমন করে পাঠাই?তোমার একটা মানসম্মান আছে না? নতুন জামাই বিনা দাওয়াতে কেমন করে যেতে দেই?

মনে মনে বলি মান সম্মান কোথায় আর থাকলো আম্মা! বউ কোথায় আছে? সেকথাই বলতে পারি না। লোকে জানলে থু থু দিয়ে যাবে মুখে! এমনিতেই বন্ধু মহলে হাসাহাসি শুরু হয়েছে। দুদিন পরে লোকের সামনে হাসির পাত্র হতে হবে আমাকে! কেমন স্বামী আমি স্ত্রীর খবর জানি না? 

মুখে বললাম, সে কথাও তো ঠিক!  তাহলে তাদের মোবাইল নাম্বারটা অন্তত আমাকে একটু দেন। আমি অতিদি কে বলি তারাতাড়ি চলে আসার জন্য। আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপনাদের বাড়িতে পড়ে আছি! শুধু তাঁকে সাথে করে নিয়ে যাবার জন্য। 

নয়তো আমাদের ওখানে আমার পরিবারের মানসম্মান বলতে আর কিছু থাকবে না, আম্মু! আম্মু বলাতে শ্বাশুড়ি আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালেন! বললাম মায়ের মতোই তো, তাই বলে ফেলেছি! ঠাট্টা করে নয়! মনে কিছু নিবেন না আম্মা! 

আমার শ্বাশুড়ি আমার শালীকে ডাকলেন এই তরু এদিক একটু আয় তো! তরু এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে কি মা! ডাকলে কেন? তোর বড় খালার নাম্বারটা একটু জামাই বাবাজী কে এনে দে তো!

তরু চলে গিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ফিরে এসে বলে, নাম্বার তো ডিলিট হয়ে গেছে মা! শ্বাশুড়ি আমার শালীর উপর রেগে উঠে জিজ্ঞেস করলেন, ডিলিট হয়ে গেছে মানে কি? কেমন করে ডিলিট হলো নাম্বারটা?

তরু আমতাআমতা করে বলে, কেমন করে যে হলো? তাই বুঝতে পারছি না। শ্বাশুড়ি আম্মা তরু কে পারলে গিলে খেতে চাইছেন! আমি মাঝখানে বাঁধা দিয়ে বললাম এরকম হয় অনেক সময়। শুধু শুধু ওকে বকবেন না আম্মা। 

জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা তরু নাম্বারটা নিশ্চয়ই মনে আছে তোমার? তুমি বল আমি লিখে নিচ্ছি। শ্বাশুড়িও আমার কথার সাথে সুর মিলিয়ে বলে, হ্যা বল নাম্বারটা! তরু মাথা নিচু করে জবাব নাম্বার তো মনে নেই। এখন কি আর কেউ নাম্বার মুখস্থ করে রাখে বল?

বললাম তবে খুঁজে দেখো কোথাও লেখা আছে না-কি? হ্যা! হ্যা! তাই দেখতো তরু! শ্বাশুড়ি তাড়া দিলেন তরু কে। কিন্তু নাম্বারটা কোথাও পাওয়া গেল না।মানে আমি শ্বশুর বাড়ি থেকেও জানতে পারছি না। সত্যি আমার স্ত্রী অদিতি কোথায় আছে? এরচেয়ে অসহায় অবস্থা আর কি হতে পারে। তাদেরকে কিছু বলতেও পারছি না। আবার সইতেও পারছি না!

নিজেকে এখন আমার একটা অপদার্থ বলে মনে হতে লাগলো।খেয়ে দেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ঘুম চোখ থেকে পালিয়ে গেছে! তার আর আসার কোন নামগন্ধও নেই। তাই বিছানা ছেড়ে চলে এলাম বারান্দায় একটু শীতল হাওয়া এসে শরীরের সাথে মনটাকেও একটুখানি শীতল করে দিয়ে গেল।

ভাবলাম বাথরুম থেকে থেকে এসে বিছানায় গিয়ে পড়ে থাকি। ঘুম যখন ইচ্ছে আসুক। না আসলে না আসুক! বাথরুম থেকে বেরিয়েছি এমন সময় কারও গালার ফিসফিস আওয়াজ আমার কানে এলো। মনে হচ্ছে মোবাইল ফোনে কথা বলছে।

বুঝতে পারলাম না, এই গভীর রাতে কে কার সাথে কথা বলছে? একবার মনে হলো তরুর কথা! কারণ এই বয়সের ছেলেমেয়েরাই তো রাত জেগে প্রেমিক প্রেমিকার সাথে কথা বলে। কিন্তু ভালো করে খেয়াল করতেই বুঝতে পারলাম, এটা তো আমার শালির কন্ঠ নয়।

এ যে আমার শ্বাশুড়ি স্বয়ং কারও সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে ফিসফিস করে কথা বলছে। অবাক হয়ে ভাবলাম তিনি এতো রাতে কার সাথে এমনভাবে কথা বলছেন? উনার যে বয়স তাতে করে অন্য কিছু ভাবাটা অবান্তর! তাই নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারলাম না! 

রান্নাঘরের দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম। আমার পিছনেও ভালো করে দেখে নিলাম, কেউ যদি দেখে ফেলে তবে নিজের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি শুরু হবে। লজ্জার কথাও ভাবতে হলো। বলতে গেলে এ বাড়িতে এখনো আমি নতুন জামাই! 

রান্না ঘরের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে কান খাঁড়া করে রইলাম। শুনতে পেলাম আমার শ্বাশুড়ি কাঁদছেন! একটু পরে বললেন, আপা এমন সর্বনাশ আমার কেমন করে হলো। এখন আমি জামাই বাজাজী কে কি বলবো?

অদিতি এমন একটা পাগলামি করতে পারে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। আর তোমরা ওঁকে দেখে শুনে রাখতে পারলে না?

এমন সময় বুঝতে পারলাম কেউ এদিকেই আসছে। তাই তাড়াতাড়ি বাথরুমের ভিতরে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম অদিতি কি এমন করেছে সেখানে? 

চলবে,,,,, 

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *