Jhumur And Siam Er Porokiya Premer Golpo Ep 4.
Jhumur And Siam Er Porokiya Premer Golpo Ep 4.
৩ ঘন্টা পর এই বাগান থেকে ঝুমুরের গলিত দেহ মাটির নিচ থেকে পুলিশ বের করে। আমার হৃদপিন্ড থেমে যাওয়ার অবস্থা। মনে হচ্ছে মাথাটা কাজ করতেছেনন । কিছুই আর ভাবতে পারছি না, মাকে বলে বাড়িতে চলে আসলাম এবং রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
চারিদিকে একটা শোরগোল শুরু হলো ঝুমুর ও আমাকে নিয়ে । আধাঘন্টা যেতে না যেতে পুলিশ আমার বাড়িতে হাজির হলো।আমার রুমের দরজায় কড়া নাড়তে থাকল। রুম থেকে বের হতে দেখি ৪ জন পুলিশ সাথে এলাকার মেস্বর ও অন্যান্য এলাকার লোকজন ও আছে।
মেম্বর আমাকে ডাক দিলো।
– সিয়াম, কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো!
– আমার সাথে এনারা (পুলিশ) এসেছে তোমাকে থানায় নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
– আমি খুব ক্লান্ত, এখন তো দুপুর! বিকেলে যায়।
– পুলিশের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠল।
– বেশি সময় না, ঘন্টাখানেকের ভেতর সব হয়ে যাবে।
– এখানে করলে হয় না?
– সব কিছু তো আর সব জায়গা করা যায় না, সেই ধরনের কেস হলে হতো।
– ঠিক আছে,
কি এক ঝামেলায় পড়লাম, আল্লাহ ভালো জানে।
– কিছু বললেন?
– না, ৫ মিনিট অপেক্ষা করেন কাপড় পরিবর্তন করে আসতেছি।
নিজেকে নিজের প্রতি অভিযোগ দিতে ইচ্ছে করতেছে। কেন মেয়েটা আমি বাড়িতে আসার সাথে সাথে আমাকে দেখা দিলো, এতদিন কেন অন্য কেউকে দিলো না? আসলে এর ভেতর কী কোনো রহস্য আছে? মানুষ মারা যাওয়ার পর তো তার আত্মা ওই সৃষ্টিকর্তার নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তাহলে কেন?
আমি কি কোনো ভাবে এই হত্যার সাথে জড়িত নাকি? ভুতের মুভিতে তো এমন দেখেছি। আসলে মাথায় শুধু প্রশ্নের উপর প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
কেনইবা মেয়েটা…. ধুর, দেশে এসে পাপ করে ফেলেছি মনে হচ্ছে। কোন বিপদে না সামনে পড়তে হয়।
কাপড় পরিবর্তন করে রুম থেকে বের হইলাম। চারিদিকের উৎসুক জনতা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কেউ ভিড়ের ভেতর থেকে ভিডিও করতেছে, তান্ত্রিক বলে উপহাস করতেছে আবার অনেকে অরেক কিছু ভালো খারাপ দুটোই বলতেছে। পুলিশ ভ্যানে উঠে রওয়ানা দিলাম থানার দিকে, লাশ আগে নিয়ে গিয়েছে।
পুলিশ ভাইদের উদ্দেশ্য করে বললাম।
– কি এক অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছি। গত পরশুদিন রাতে দেশের মাটিতে পা রেখেছি, গতদিন গেছে আত্মীয় স্বজনদের সাথে কাটিয়ে, রাতে ঘটল ওই ভয়ানক ঘটনা, সকালে আর এক ঘটনা। বুঝতেছিনা আরো কী কী ঘটার বাকি আছে।
– এক পুলিশ ভাই বলে উঠল, মেয়েটা কেন আপনাকে দেখাদিলো অন্যদের রেখে?
– সেটাই তো আমি বুঝতেছি না, এই প্রশ্নটা শুধু মাথায় প্যাঁচ খাচ্ছে।
সামান্য কিছু কথা হলো গাড়িতে এর পর থানাতে পৌছে গেলাম। আমাকে নিয়ে নির্দিষ্ট আলাদা একটা কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো। এবং এই কেসের যে অফিসার ছিলো সে আমাকে ঘটনাটার বিস্তারিত বলতে বলল।৷ রাতে আমার সাথে যা যা ঘটেছিলো সব বললাম এবং তারা কিছু আমার ব্যক্তিগত তথ্য ও জিজ্ঞেস করল। বলার পর৷ দুপুর ৩টার দিকে থানা থেকে বের হয়ে আসলাম। প্রায় ২ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ চলে।
বাড়িতে এসে বাড়ির দরজা জানালা বদ্ধ করে দিতে বলি মাকে, আর আমি দরজা বন্ধু করে কানে তুলা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি মোবাইলটা অফ করে। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে বাহিরে আর বের হলাম না। ইচ্ছা ছিলো গ্রামের প্রকৃতিটা অনেক দিন পর উপভোগ করব আর হলো কোথায়।
বাড়িতে ভাই- বোন, ভাগনে-ভাগনি, চাচা-চাচি মানে পুরো ২৫ জনের মতো লোকসংখ্যা রয়েছে এখন আমাদের বাড়িতে। শুধুমাত্র আমার জন্য এসেছে তারা। আর কি থেকে কি ঘটে গেল।
বড় ভাবিকে বললাম।
– আচ্ছা ভাবি, বলেন তো আমার সাথে যেটা ঘটেছে এটাকে কি বলে?
– হয়তো আধ্যাত্মিক কোনো শক্তি হবে। তা না হলে এতো লোক থাকতে মেয়েটা তোমাকে দেখা দিবে কেন?
– কে জানে।
– সারা গ্রামে তো তোমাকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। লোকে বলছে যে, মেয়েটা তোমাকে দেখা দেওয়ার প্রধান কারন হলো তোমাকে বললে সকলে জানতে পারবে তাই।
– তা না হয় বুঝলাম, মেয়েটা নিখোঁজ কিভাবে হলো?
– ওর বাবা – মা তো বলে, প্রতিদিনের মতো খেলতে বের হয়েছে বিকেলে। সন্ধ্যায় আর বাড়িতে ফেরেনি।
– এতটুকু একটা মেয়ে, মাঝে মাঝে খোঁজ নিতে হয় না।
– মেয়েটা একটু চঞ্চল প্রকৃতির চিলো তো তাই এক জায়গা স্থির থাকতো না। তবে অন্য সবদিক থেকে ভালো ছিলো।
– রশিদ চাচার কি কারো সাথে শত্রুতা ছিলো?
– সে যে লোক তার শত্রু কোথা থেকে আসবে।
– কেন, যেন ধরো, ভাই ভাই জমি বা অন্য কিছু নিয়ে শত্রুতা অথবা বাহিরের কারো সাথে শত্রুতা?
– কাদেরদের সাথে জায়গা নিয়ে শত্রুতা ছিলো, আর কাদেরের ছেলে তো এই মামলার প্রধান আসামি।
– তা হলে আর খুনিকে খোঁজা লাগতেছে কেন?
– তবে, কাদেরের পরিবার কিছু জানে না এবিষয়ে।
– এতটুকু নাবালক শিশুকে কে বা কারা তাহলে মারল?
পাশ থেকে মা বলে উঠল।
– আরে ওসব নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না, পুলিশ আছে ঠিকি খুজে নিবে।
– তা ঠিক আছে মা, তবে ঘটনাটার উদঘাটন তো প্রয়োজন। যেহেতু আমি কোনো না কোনো ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছি।
– আল্লাহ কারে দিয়ে কি করাবে তা বলা যায়। হয়তো তোকে দিয়ে এটা করিয়েছে যেন লোকে জানতে পারে। অন্য কেউকে দিয়ে জানালে তো এতটা শোরগোল হতো না।
– তা ও ঠিক বলেছ। তবে মা তোমাকে পার্সোনালি একটা কথা বলতে চাই উত্তর দিবে কী?
– কি কথা!
– আস্তে বলি, কেউ যেন না শোনে। তুমি যে সকালে বাগানের কাছে গিয়েই কোনো কিছু খোজাখুজি, বা কোনো নিশানা না দেখে পুলিশ কল করলে, কেন জানতে পারি কী?
– কি বলতেছিস এসব, একটু বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
আরে আমি তো ভয়ে ফোন দিয়েছি। যেহেতু তুই শেষ মেয়েটাকে এই বাগানে দেখেছিস।
– মায়ের কথায় কেমন যেন আমার একটু সন্দেহ বৃদ্ধি পেল। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে মায়ের সাথে নিরিবিলি কথা বলতে হবে। হয়তো কিছু জানলে ও জানতে পারে। তা না হলে রশিদ চাচাকে আগে খবর না দিয়ে মা পুলিশকে কেন ফোন করতে বলল।
চলবে ….
সবার সাড়া পেলে আরেক পাঠ দিব আজকে।